Advertise With Us
For Questions, Enquiries, Click Here
Page | Group - Follow us - Call Us - Admin - bdpathan420@gmail.com

কখনো খেয়াল করে দেখেছেন, বাঙালি জাতির কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কমপ্লেক্সন বা গায়ের রঙ নেই। আমরা না কৃষ্ণাঙ্গ, না শ্বেতাঙ্গ! আবার অস্ট্রেলিয়ান বা মঙ্গোলিয়ানদের মতোও না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরকম নজির পৃথিবীর আর কোনো জাতির নেই। তাই বাঙ্গালিদেরকে বলা হয় শঙ্কর বা মিশ্র জাতি। আর্য আর অনার্য- মূলত এই দুই জাতির মিশ্রণে আমাদের উৎপত্তি।

আর্য অনার্য কারা সেটা বলার আগে বলে নেই, বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর যখন পৃথিবী বিভিন্ন মহাদেশে ভাগ হয়ে যায়, তখন চারটি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়ঃ নেগ্রেডো, ককেশিয়ান, মঙ্গোলিয়ান আর অস্ট্রিক। নেগ্রেডো মানে যারা আফ্রিকান অঞ্চলে বাস করতো। ককেশিয়ানরা মূলত ছিলো ইউরোপিয়ান। মঙ্গোলিয়ানদের বাস ছিলো চীন-জাপান এই অঞ্চলে আর অস্ট্রিকরা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে।

আর্যরা ছিলো ককেশিয়ানদের একটা অংশ- সেমেটিক জাতির (যারা সেমেটিক ভাষায় কথা বলতো) লোক। বাস করতো ইউরাল পর্বতের পাদদেশে। এদের ধর্ম ছিলো বৈদিক, ধর্ম গ্রন্থ বেদ। মূলত গ্রীক, জার্মান, ল্যাটিন, ফার্সি ও সংস্কৃতভাষী জাতিরা আর্য হিসেবে পরিচিত। 

আর অনার্য হচ্ছে এই ভূখণ্ডে আর্যরা আসার আগে যারা বাস করতো তারা।
কিন্তু পৃথিবীর আর কোথাও না হয়ে এখানেই কেনো মিশ্রণটা হলো?
ছোট করে বললে, এর জন্যে দায়ী আমাদের মাটি- মানে সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা এদেশের মাটিই আমাদের এই বিচিত্র বর্ণের জন্যে নেপথ্যে দায়ী।
কিভাবে? সেটা জানতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে অনেকদিন পিছনে। অনেক দিন মানে অ-নে-ক দিন- প্রায় ৬ হাজার বছর।

পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে উর্বর অঞ্চল হচ্ছে বাংলাদেশ ও এর আশে পাশের এলাকা, সে কারণে সেই আমল থেকেই এদেশে পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকেই ছুটে এসেছে সকল জাতি গোষ্ঠীর মানুষ।

সেই আমলের কথা চিন্তা করুন, তখনকার মানুষের একমাত্র চিন্তা ছিলো খাদ্য সংস্থান। যেখানে খাদ্যের নিশ্চয়তা পাওয়া যেতো, সেখানেই তারা জোট বেঁধে ছুটে যেতো। তৎকালীন যুদ্ধ-বিগ্রহ ক্ষমতার লড়াই সবই ছিলো খাদ্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে। হেঁটে হেঁটেই তখন মানুষ পৃথিবীর এক মাথা থেকে অন্য মাথায় চলে যেতো। হয়তো অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে কয়েক প্রজন্ম কেটে যেতো। কেউ কেউ নতুন নতুন জায়গায় বসতি গড়তো। এভাবে যে জাতি যে অঞ্চল দিয়ে ভ্রমণ করতো ঐ এলাকায় তাদের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত নতুন জাতির উদ্ভব হতো।
পৃথিবীর বুকে সবচে উর্বর অঞ্চল হচ্ছে বাংলাদেশ ও এর আশে পাশের এলাকা, সে কারণে সেই আমল থেকেই এদেশে পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকেই ছুটে এসেছে সকল জাতি গোষ্ঠীর মানুষ। আর তাদের মিশ্রণেই আজ আমরাও পেয়েছি আমাদের এই বিচিত্র গায়ের রঙ।

তো সেই ৬ হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে কালো দেহের এক আদি জাতি গোষ্ঠীর বসবাস ছিলো। এরা হচ্ছে নিগ্রো। এরা প্রায় এক হাজার বছর এই এলাকায় বসবাস করে।
এরপর ৫ হাজার বছর আগে অস্ট্রিক বা অস্ট্রো এশিয়াটিক জাতি গোষ্ঠী ইন্দোচীন হয়ে আসাম দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে ও নিগ্রোদেরকে উৎখাত করে। তখন নিগ্রোরা ভারতের দক্ষিণাঞ্চল (তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক ইত্যাদি) আর শ্রীলংকায় বাস করতে শুরু করে। তামিল নায়কদের চেহারা কল্পনা করুন, গায়ের রঙ কাদের সাথে মিলছে বুঝতে পারছেন তো?

এরপরেও নিগ্রোদের কিছু অংশ এদেশে থেকে যায়। এরাই কোল, ভীম, মুন্ডা, সাওতাল, পুলিঙ্গ, মালপাহাড়ি ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বহন করে। তারমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা নয়, বরং এরাই হচ্ছে এই ভূখন্দের মূল আদিবাসী।

অস্ট্রিকদের সমসাময়িক সময়ে বা কিছু পরে ভূমধ্যসাগরের উত্তরাংশ থেকে (এই ব্যাপারটা স্বীকৃত না) দ্রাবিড় জাতিগোষ্ঠীর ভারতবর্ষে আগমন ঘটে। এরা সভ্যতায় উন্নত ছিলো। এরা অস্ট্রিক জাতিকে তাড়িয়ে দেয় না, বরং তাদেরকে গ্রাস করে নেয়।

এভাবে নেগ্রেডো, অস্ট্রিক আর দ্রাবিড়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় আর্যপূর্ব বাঙালি জনগোষ্ঠীর তথা অনার্য জাতি গোষ্ঠীর। আর তিন রঙের মিশ্রণে এদের গায়ের রঙও হয়ে পড়ে নানান বর্ণের।

সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে ইউরাল পর্বতের পাদদেশ থেকে আরিয়ান জাতিগোষ্ঠী ভারতবর্ষে আগমন করে এবং বাংলায় আসতে আসতে এদের নাম আর্য রূপ লাভ করে। এরা এসেছিলো আরব, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারতের উপরের অংশ দিয়ে। এ জন্যেই এই এলাকাগুলোর লোকেরা যথেষ্ট ফর্সা এবং সুঠাম।

প্রায় ২ হাজার বছর আগে মঙ্গোলীয়রা বাংলায় আগমন করতে চাইলেও আর্যরা তাদেরকে প্রতিহত করে। এজন্যে বাঙালি রক্তে মঙ্গোলীয় উপস্থিতি স্বীকৃত নয় (এটাও স্বীকৃত না)। তারা বাংলার উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থান করতে থাকে। এরাই চাকমা, ত্রিপুরা, হাজং প্রভৃতি উপজাতি গোষ্ঠীর অতিত্ব বহন করে।

এভাবে আর্য অনার্যের সমন্বয়ে প্রায় দেড় হাজার বছরের বংশ পরম্পরায় সৃষ্টি হয় এক নব সংকর জাতি গোষ্ঠীর তথা বাঙালি জাতির। এরপরেও কিন্তু মিশ্রণ থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের বণিকেরা ধর্ম প্রচার ও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বাংলায় আসেন ও তারা অনেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাছাড়া একেক সময়ে এই এলাকা শাসন করেছে নানান অঞ্চলের মানুষ- গুপ্ত, সেন, বর্মন, কম্বোজ, খড়গ, তুর্কি, আফগান, মুঘল, পর্তুগিজ, ইংলিশ- এদের সবার কাছে থেকে নানান বৈশিষ্ট্য নিয়ে আজ এই শংকর বাঙালি জাতিস্বত্তার উদ্ভব।

........অনলাইন থেকে সংগৃহীত।

Post a Comment

plz! wait for reply.

 
Top